প্যাকেজিং যেকোনো প্রোডাক্ট বিজনেসের জন্য গুরত্বপূর্ণ। কোন প্রোডাক্ট সেটা কোন বিষয় না, বিশেষ করে যদি আমেরিকা ও ইউরোপে রপ্তানি করেন। আপনি হয়তো খুব ভালো একটি প্রোডাক্ট বানিয়েছেন কিন্তু প্যাকেজিং যদি ভালো না হয় তবে ক্রেতারা ভাববেন যে প্রোডাক্টও হয়তো ভালো হবে না। এক বক্স সিরিয়াল বাকর্ন ফ্লেক্স আমেরিকাতে যদি হয় ৩.৫০ ডলার তাহলে শুধু সিরিয়ালের দাম কিন্তু মাত্র ১০ সেন্ট। তাহলে বাকি ডলার? ঐ যে প্যাকেজিং, বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য খরচ হচ্ছে এই সাড়ে তিন ডলারের বাকি অংশ। আমরা প্যাকেজিং সম্পর্কে খুব ভালো জানি কারণ গত ১৯ বছর ধরে আমরা ফুড প্যাকেজিং নিয়ে কাজ করছি। এবং আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানির কাজ করি।
প্যাকেজিং এর পুরো ব্যাপারটা আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের একটা ঘটনা দিয়ে বোঝাতে চাই।
১৯৮৫ সালে আমি চাকরি পাবার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে আমার বাবা-মা আমাকে বিয়ে করতে বলেন। কিন্তু আমি তাদেরকে আরো ১-২ বছর পরে বিয়ে করার ইচ্ছার কথা জানাই। তারা বললেন তারা অপেক্ষা করতে পারবেন না কারণ আমার ছোট ভাইয়ের পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। সে একজনকে ভালোবাসতো এবং তারা বিয়ের জন্য তৈরি ছিল। কিন্তু আমি ছিলাম না। তাই আমি তাকে বিয়ে করিয়ে দিতে বললাম। আমাকে রাজি করাতে তারা ৫ জন ভালো ভালো পরিবারের মেয়েকে দেখতে বললেন এবং এমন ব্যবস্থা করলেন যেন আমি ১ জনকে বেছে নিই। ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম- সবগুলো মেয়েই পরে এসেছিল টি শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট। এটা আমার জন্যে একটা প্যাকেজিং এর প্রবলেম হয়ে গেলো। কারণ আমি প্যাকেজিংটা অন্যরকম চাচ্ছিলাম, সালোয়ার কামিজ বা শাড়ী ।
আমার প্রশ্ন ছিল “কেন”? কেন সবাই একই রকম পোশাক পরছে? আমি বুঝতে পারছিলাম না। এছাড়াও সবাই বলছিল যে, আমেরিকা কত ভালো। পরে আমি বুঝতে পারলাম, আমি আমেরিকা থেকে এসেছি তাই সবাই আমাকে ওরকম পোশাক পরে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করছিল। যখনই আমি তাদেরকে ওরকম পোশাকে দেখলাম আমি তাদের প্রতি আগ্রহ হারালাম। তাদের চেহারা যেরকমই হোক না কেন। সুন্দর একটা ব্যাড প্যাকেজিং এর উদাহরণ। আমার বাবা-মা জিজ্ঞেস করলেন, কোন মেয়েটিকে আমার ভালো লেগেছে? আমি বললাম আমাকে আর কিছুটা সময় দিতে। আমার এক চাচার মেয়ের বান্ধবী আমাদের পরিবারের সবাইকে তাদের বাসায় দাওয়াত দেয়। মেয়েটি ছিল আমার চাচার বন্ধুর ছোট মেয়ে। চাচতো বোনের ছোট বোনের সাথে বন্ধুত্ব। ঐ সূত্রে তাঁদের বাসায় যাওয়া এবং বড় বোনের সঙ্গে পরিচয়। এই মেয়েটি আমাকে কিছু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করলো। সে সালোয়ার-কামিজ পরেছিল। সে আমাকে বললো “আপনি আমেরিকাতে থাকেন? আমি আমেরিকাকে পছন্দ করিনা। আমেরিকা খুবই খারাপ একটি দেশ। তারা ইরাক-ইরানের মাঝে যুদ্ধের কারণ। তারা ২ দেশের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করছে। যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে”। আমি তার কথা শুধু শুনেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু সবার শেষে সে আমাকে যখন “তুমি” সম্বোধন করে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কোন স্কুলে পড়ো?” তখন আমার মনে হলো আমার হাফ হাতা শার্ট ও থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আসা উচিত হয় নি। মেয়েটি ছিল বি.এ পাশ করা একজন আর সে ভাবছিল আমি হাই-স্কুলে পরি! আগে যে ৫ জন মেয়েকে বাবা-মা পছন্দ করেছিলেন তাদের মাঝে এ মেয়েটি ছিল না। তো আবার যখন আমার বাবা মা জিজ্ঞেস করলেন কোন মেয়েটিকে ভালো লেগেছে আমি বললাম তাদের পছন্দের মাঝে কেউ নয়। এর বাইরের একজন। কিন্তু সে হয়তো রাজি হবে না। তাই পরের দিনই আমার বাবা-মা সেই মেয়েটির বাড়ি গেলেন। যদিও আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত ছিলাম কোনো আশা নেই।
আমার শ্বশুর ছিলেন একজন মুক্তিবাহিনী কমান্ডার। যিনি বহু মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংবাদিক এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের খুব ভালো বন্ধু। যাই হোক, পরের দিন বাবা-মা সেই বাড়িতে গিয়ে মেয়েটির বাবাকে আমার সাথে বিয়ে দিতে প্রস্তাব দিলেন। আলোচনার পর মেয়ের বাবা জানালেন এটা সম্পূর্ণ তার মেয়ের সিদ্ধান্ত। আমি, আমার ফ্যামিলির সবার খোঁজ উনারা খুব ভাল করে নিলেন।
‘৭০ এর দশকে যখন আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাই তখন আদর্শ পোশাক ছিল সালোয়ার কামিজ এবং শাড়ী। এটাতেই মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগতো। এখন আপনারা বুঝতে পারবেন কেন প্যাকেজিং গুরত্বপূর্ণ। আমি বোঝাতে চেয়েছি, একজন মানুষের বিয়ে হবে কি না তা অনেকাংশেই সে বাইরে থেকে দেখতে কেমন তার উপর নির্ভর করে । যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। একিভাবে একটা প্রোডাক্ট কাস্টোমার নিবে কি নিবেনা তা নির্ভর করছে প্যাকেজিং এর উপর। একটা গ্রোসারি বা গিফট আইটেম বা অন্যান্য প্রোডাক্টের জন্য যে প্যাকেজিং সেটা আকর্ষনীয় এবং সুন্দর করার চেষ্টা রাতদিন চলছে। কাজেই ঠিক প্যাকেজিং খুবই গুরুত্বপূর্ন। আমি যে মেয়েটিকে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করি সে কিন্তু শুরুতে ৫ জনের তালিকাতে ছিলই না এবং আলাদাভাবে দেখা হয় চাচাতো বোনের যোগাযোগের সূত্রে।

2019-02-06T17:00:13+06:00