আমি যদিও মার্কেট এনালাইসিস, কস্ট এনালাইসিস এবং বিজনেস প্ল্যান নিয়ে অনেক পোস্ট দিয়েছি গত তিন বছর। কিন্তু সর্বশেষ পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে ইমেইল আসছে এ বিষয়ে। আমি আলাদাভাবে উত্তর না দিয়ে নিচে ব্যাখ্যা করলাম আবার। খুব সহজ ভাষায় গত দুটো পোস্ট থেকে কিছু তথ্য নিয়ে ব্যাখ্যা করছি।

তার আগে এই কিছুদিনে ইমেইল থেকে ইন্টারেস্টিং কিছু প্রশ্ন না দিয়ে পারলাম না –

“আমার নিজের কোন পয়সা নাই, ফ্যামিলি থেকেও পয়সা দিতে পারবে না। ব্যাংক থেকে লন দিবেনা। পয়সা ছাড়া কিভাবে ব্যবসা করবো?”

১৯৭৬ সালে আমেরিকা স্কুলে পড়া অবস্থাতেই খবরের কাগজের ব্যবসা করেছি কারো কাছ থেকে কোন পয়সা নেয়া ছাড়াই। পরে ব্যবসা করেছি কারো কোন পয়সা ছাড়াই। এমনকি ব্যাংক থেকে লোন পর্যন্ত নিই নি। ৩০ বছরের উপরে ব্যবসা করছি এইভাবেই। যে কেউ ব্যবসা করতে পারে ফ্যামিলি বা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কিন্তু কোন ধরণের সাহায্য বা ব্যাংক থেকে লোন ছাড়াই ব্যবসা করাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং সন্তুষ্টির। জ্ঞানই শক্তি। মানে টাকা না থাকলে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যবসা করতে হবে টাকা ছাড়াই। বায়ার এবং সেলারের মাঝে কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতে হবে। ডিটেইলস পরে দেয়া হবে।

“যারা অলরেডি ব্যবসা করতেছে ইন্ডাস্ট্রি আছে তারা তো সহযে ব্যবসা প্ল্যান পাঠিয়ে ব্যবসা করার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে আর আমরা যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি আমাদের কোন চান্স নেই। তাই না?”

আমি আমেরিকাতে স্কুলে পড়া অবস্থাতেই বাসায় বাসায় খবরের কাগজ বিতরণ করতাম। সেটা থেকে যা উপার্জন করতাম তা দিয়ে সব খরচ মেটাতে পারতাম না। অন্যদিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রচন্ড ইচ্ছা থেকে বাবার থেকেও কোন সাহায্য নেইনি। এটাই আমাকে পরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে ।কাজেই একজন ইন্ডাস্ট্রির মালিককে সাহায্যের আগে যারা বেঁচে থাকার জন্য, পরিবারকে সাহায্য করার জন্য উদ্যোক্তা হয়ে বাঁচার মত বাঁচতে চাউ তাদের সাহায্য করাটা ফার্স্ট প্রায়োরিটি। কিন্তু একইসাথে সফল ইন্ডাস্ট্রি মালিকদের হেল্প করে যদি কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় বাংলাদেশে তাহলে কেস বাই কেস বেসিসে তাদের সাহায্য করা যেতে পারে।

আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে মার্কেট এনালাইসিস, কস্ট এনালাইসিস এবং বিজনেস প্ল্যান নিয়ে সহজ ভাষায় বলতে। প্রথমে বলবো কেউ কাউকে উদ্যোক্তা বানিয়ে দিতে পারেনা। উদ্যোক্তা যারা হতে চায় তারা নিজেরাই নিজেদের উদ্যোক্তা বানাবে । কঠোর পরিশ্রম, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এবং দূরদর্শিতা থাকতে হবে । তারপরো ঝুঁকি থাকবে। এই ঝুঁকিটাই উদ্যোক্তা হওয়ার একটা অংশ।

আমেরিকাতে প্রতি ১০জন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৯জনই ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের রেশিও জানা নাই কিন্তু সঠিক মার্কেট এনালাইসিস, কস্ট এনালাইসিস এবং বিজনেস প্ল্যান করতে পারলে ঝুঁকিটা কমিয়ে আনা যাবে এবং সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ অনেকগুণে বেড়ে যাবে।

মার্কেট এনালাইসিস- সংক্ষেপে এবং সহজ ভাষায় মার্কেট এনালাইসিস হচ্ছে একটা পুরো দেশকে বা একটা এরিয়া নিয়ে রিসার্চ করার পরে প্রোডাক্টের কি কোয়ালিটি, দাম ইত্যাদি ডাটাবেজ আকারে তৈরি করা এবং খুঁজে বের করা কোন প্রোডাক্টে অল্প সময় খরচ করে সবচেয়ে বেশী লাভবান হওয়া যায়।

জুট পলিব্যাগ নিয়ে মার্কেট এনালাইসিস করা যাক। জুট পলিব্যাগ হাঁটি হাঁটি পা পা করে ডেভেলপড হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কবে রেডি হবে এটার উপর নির্ভর না করে যখন রেডি হবে তখনকার উপর নির্ভর করতে হবে। কারণ গ্লোবালি জুট পলিব্যাগের চাহিদা প্রচুর। বিশেষ করে আমেরিকা এবং ইউরোপ সহ মিডল ইস্টের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে। আরব আমিরাতে এক্সেস প্রিন্টিং সলিউশনের ২০,০০০ টন মাসে জুট পলিব্যাগ দ্বারা রিপ্লেস করা সম্ভব ধীরে ধীরে। ধরা যাক জুট পলিব্যাগ দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ১০ টন এক্সপোর্ট করতে পারবে। এনালাইসিসের জন্য ২ টনকে ধরি।

কস্ট এনালাইসিস – প্রতিদিন ২ টন করে কেনা হলে মাসে ৬০ টন হবে। টোটাল ৬ কন্টেইনার। ৬০ টনের ক্রয়মূল্য, CIF (খালিদ পোর্ট , শারজাহ, আরব আমিরাত) হিসেব করতে হবে । বাংলাদেশে যারা বায়িং হাউজ বা অফিস থেকে কোঅর্ডিনেট করছে অফিস ভাড়া সহ, বেতন এবং সব খরচ তাদের কস্ট হিসেবে ধরতে হবে।

ধরা যাক, প্রতি কেজির ক্রয়মূল্য ১০ টাকা। সব খরচ মিলিয়ে ১৩ টাকা।

বিক্রয়মূল্য ১৫ টাকা হলে নেট প্রফিট ১৩%।

বিক্রয়মূল্য ২০ টাকা হলে নেট প্রফিট ৩৫%।

বিক্রয়মূল্য উঠানামার উপর নির্ভর করবে নেট প্রফিটের।

যদি আমাদের ক্রয়মূল্য ১০ টাকা কিন্তু বিক্রয়মূল্য ৯ টাকা হয় তাহলে লসের সম্মুখীন হবো আমরা। সেক্ষেত্রে বিজনেস না করাটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত ।ব্যবসায় আসার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে টাকা উপার্জন করা। তাই কস্ট এনালাইসিস আপনাকে ব্যবসা শুরু করার আগেই লাভ হবে নাকি লস হবে তার একটা সম্যক ধারণা দিবে। কাজেই কস্ট এনালাইসিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। জুট সলিউশনস এর মাধ্যমে জুট থেকে তৈরি অনেক প্রোডাক্ট যা গ্লোবালি মার্কেটিং করা যাবে কিন্তু আপাতত জুট পলিব্যাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছি।

বিজনেস প্ল্যান বানানো শুরু হবে যখন প্রফিট পাওয়া যাবে। সহজ ভাষায় কস্ট এনালাইসিস করে মার্কেট এনালাইসিস করে পুরা বিজনেস দাড় করাটাকে বিজনেস প্ল্যান বলে।

একজন কমেন্ট করেছিল স্ক্রিন প্রিন্টিং নিয়ে। আরব আমিরাত এবং এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বরে প্রচুর গিফট আইটেমের অর্ডার নেয়া হয়। যেমন দেয়াল ঘড়ি, মানিব্যাগ, ব্যাকপ্যাক, টিশার্ট যা কাস্টোমারদের ভিজিটের সময় ডিস্ট্রিবিউট করা হয় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এক একটা কাস্টোমারের অর্ডার ১০,০০০ ডলার এমনকি তার থেকেও বেশী হয়ে থাকে।

মানিব্যাগ এবং টিশার্ট আমি দেখেছি। বাংলাদেশ আরো ভাল করতে পারতো যেটা ইন্ডিয়া থেকে আসে ।

গিফট আইটেমের মার্কেট এনালাইসিস। কোন কোন কোম্পানি বিক্রি করছে, কততে বিক্রি করছে, তাদের সম্মুখীন হতে হলে কি কি করা দরকার ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রোডাকশন কস্ট চায়নার ১/৩ এবং ইন্ডিয়ার ১/২ কিন্তু প্রোডাকশন কস্ট কম হলেই সফল হওয়া যায়না কার্যকর মার্কেটিং ছাড়া।ধরা যাক প্রতিটি মানিব্যাগ এবং টিশার্টের বিক্রয়মূল্য ৭৫০ টাকা করে। ক্রয়মূল্য সহ আনুষাঙ্গিক সব মিলিয়ে যদি খরচ হয় ৫০০ টাকা তাহলে নেট প্রফিট ৩৩%।

তাই কস্ট এনালাইসিস মানে হচ্ছে প্রতিপিসের ক্রয়মূল্য , শিপিং কস্ট , স্যালারি কস্ট , ভাড়া এবং অন্যান্য সব কস্ট যেটা অবশ্যই পণ্য সম্পর্কিত। ভলিউম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ ভলিউম বাড়লে দাম কমবে সেইসাথে প্রোডাকশন কস্ট কমে যাবে, খরচও কমবে। মনে রাখতে হবে যে একটা মানিব্যাগ অথবা একটা টিশার্ট নিজে প্রোডাকশন করে বিক্রি করে খরচ পোষাবে না যেটা ভলিউম বাড়লে সম্ভব।

2018-06-11T02:25:58+06:00